Tania Roy Chowdhury: ২০২২ সালে ৩০ শে জুলাই পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের মহিলা জনসাধারণের জন্য চালু করেন লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প (Lakshmir Bhandar Scheme)। প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল, মহিলাদের হাতে মাসিক হাতখরচা তুলে দেওয়া। তাদের কিছুটা স্বাবলম্বী করে তোলা। কথা মত প্রত্যেক মাসে সরকারি উদ্যোগে একটি নূন্যতম অর্থ সাহায্য সরাসরি পাঠিয়ে দেওয়া হত রাজ্যের মহিলাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। তবে সম্প্রতি এই প্রকল্পের টাকা বাড়ানোর কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Lakshmir Bhandar Scheme Double Money)। এপ্রিল মাস থেকেই বর্ধিত অর্থ আসার কথা মহিলাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে (Lakshmir Bhandar Scheme 2024)।
পশ্চিমবঙ্গের ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্প (West Bengal Lakhmir Bhandar Scheme 2024)
রাজ্য সরকারের তরফে চালু করা লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল, প্রত্যেক মাসে মহিলাদের হাতে একটি নির্দিষ্ট আর্থিক সাহায্য তুলে দেওয়া। প্রথমদিকে ঘোষণা হয়েছিল সরকার মহিলাদের প্রতি মাসে ৫০০ টাকা ও সংরক্ষিত শ্রেণীর মহিলা দের ১০০০ টাকা করে অর্থ সাহায্য পাঠাবে। সমাজে যখন প্রথম লক্ষ্মীর ভান্ডার এসেছিল তখন থেকেই এই নিয়ে নানা মতবিরোধ থাকলেও অনেক কাটা ছেঁড়া চললেও এই সুবিধা নিতে কেউ কিন্তু পিছপা হন নি। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর নজরে লক্ষ্মী ভান্ডার করার মূল লক্ষ্য ছিল বহু মহিলা রয়েছেন যারা কেবলমাত্র গৃহকর্ম সম্পাদন ছাড়া অন্য পেশার সঙ্গে যুক্ত নন। সেই সব মহিলাদের অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর করে তুলতে চেয়েছিলেন রাজ্য সরকার। মহিলাদের হাতে অর্থায়নের মাধ্যমে প্রতিটি পরিবারে আয়ের সংস্থান করাই প্রকল্পের প্রকৃত উদ্দেশ্য। এই লক্ষীর ভান্ডার এর মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ সরকার আর্থিক দিক থেকে অনগ্রসর পরিবারগুলির প্রধান মহিলা সদস্যের হাতে প্রতি মাসে আর্থিক সাহায্য তুলে দেওয়ার জন্যে এই প্রকল্প চালু করেছে।
১) রাজ্যের ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পের নিয়মাবলী (West Bengal Lakhmir Bhandar Scheme Rules 2024)
লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে আবেদন জানাতে হলে কিছু নিয়ম রয়েছে। যেমন- i) কমবেশি সমস্ত মহিলারা এই প্রকল্পের আওতায় আসবেন বিশেষ করে যাদের বয়স ২৫ এর বেশি এবং 60 এর মধ্যে এর পাশাপাশি ii) যারা কোন সরকারি সংস্থা বা কর্মের সাথে এবং অন্য কোন সুবিধা আওতায় রয়েছেন অথবা ইনকাম ট্যাক্স দিচ্ছেন তারা আবেদন করতে পারবেন না।
২) লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে আবেদন করার পদ্ধতি (West Bengal Lakhmir Bhandar Scheme Application Process 2024)
মূলত অনলাইন মাধ্যমে লক্ষ্মীর ভান্ডারের জন্য আবেদন করা যাবে। সেই অনলাইনে করার কিছু পদ্ধতি দেওয়া হল। প্রথমত প্রকল্পের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদনপত্রটি ফিল আপ করে যে সমস্ত ডকুমেন্ট চাওয়া হয়েছে সেই ডকুমেন্টস গুলো ঠিকঠাক ভাবে আপলোড করে ভেরিফাই করলেই আবেদন জমা পড়ে যাবে। তাছাড়া আপনি দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে গিয়ে প্রকল্পে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করার জন্য আবেদন করতে পারেন।
৩) লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের সুবিধাগুলি কী কী? (West Bengal Lakhmir Bhandar Scheme 2024)
এই প্রকল্পের আওতায় যে সমস্ত মহিলারা প্রতি মাসে টাকা পাচ্ছেন, তা দিয়ে মহিলারা সংসারে খরচ সহ নিজেদের ইচ্ছেমতো হাত খরচা হিসেবে ব্যবহার করতে পারছেন। এই স্কিমে সাধারণ ক্যাটাগরির মহিলাদের প্রতিমাসে পাঁচশো টাকা করে প্রতি বছরে ছয় টাকা করে দিচ্ছে রাকটি সরকার। অন্যদিকে সংরক্ষিত শ্রেণীভুক্ত, এসসি ও এসটি ক্যাটাগরির যে সমস্ত মহিলারা রয়েছেন তাঁরা প্রতিমাসে হিসেবে এই স্কিম থেকে এক হাজার টাকা করে পাচ্ছিলেন। যা বার্ষিক হিসেবে বারো হাজার টাকা হয়।
৪) লক্ষ্মীর ভান্ডারে এবার দ্বিগুন টাকা!
এবার এই ভোটের মুখে সুবিধার মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। অনেকের মতে, ইলেকশনের আগে মাস্টার্স স্ট্রোক খেলার চেষ্টা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। এক ঘোষণায় একেবারে দ্বিগুণ করে দিলেন লক্ষ্মীর ভান্ডারের আর্থিক সাহায্য। এই ঘোষণার পর থেকে, আর ৫০০ টাকা নয় বরং হাজার টাকা করে অ্যাকাউন্টে ঢুকবে মহিলাদের। আর সংরক্ষিত শ্রেণীর মহিলারা পাবেন প্রতিমাসে বারোশো টাকা করে।
গত সেপ্টেম্বরে রাজ্যে দুয়ারে সরকার শিবির অনুষ্ঠিত হয়েছিল। পরিসংখ্যান বলছে, তার আগে উপভোক্তার সংখ্যা ছিল এক কোটি ৯৮ লক্ষ ২৭ হাজার ২১ জন। গত বছরের শেষে এই প্রকল্পে নাম লিখিয়েছেন আরও ৯ লক্ষ মহিলা। ফলে উপভোক্তার সংখ্যা বর্তমানে পৌঁছে গেছে প্রায় দুই কোটিরও বেশি। এই প্রকল্পে তফসিলি জাতি এবং উপজাতিভুক্ত মহিলারা এতদিন পর্যন্ত মাসিক এক হাজার টাকা করে পেতেন। সাধারণ শ্রেণিভুক্ত মহিলারা পেতেন মাসিক ৫০০ টাকা করে। এবার থেকে সাধারণরা ১০০০ টাকা আর তফসিলি জাতি এবং উপজাতিভুক্তরা পাবেন ১২০০ টাকা করে। ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ স্কিমে ৬০০০ টাকা ও ২৪০০ টাকা মিলবে। রাজ্যের মহিলারা যারা এবার ১০০০ টাকা করে প্রত্যেক মাসে পাবেন, তারা একবারে নয় বরং ধাপে ধাপে ছয় মাস ধরে ছয় হাজার টাকার আর্থিক সাহায্য পাবেন সরকারের তরফে। অন্যদিকে যে সকল মহিলারা প্রতিমাসে ১২০০ টাকা করে পাবেন, সেই সকল মহিলারা ২৪০০ টাকা পাবেন দুই মাসে। অর্থাৎ উভয় ক্ষেত্রেই ধাপে ধাপে সকল মহিলাদের অ্যাকাউন্টে ঢুকবে সরকারের তরফে উল্লিখিত আর্থিক সাহায্য।
লক্ষীর ভান্ডারের এই বর্ধিত টাকা নতুন আয়কর বর্ষের শুরুতে অর্থাৎ ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে কার্যকরী হবে। এবং আমাদের পশ্চিমবঙ্গের মহিলারা মে মাস থেকে সেটি হাতে পাবেন। ভোটের আগে এই নতুন চমক কতটা আগত ভোটের ফলাফল কে প্রভাবিত করতে পারে এবং এই প্রতিশ্রুতি ও কতটা বাস্তবায়িত হয় পুরোটাই এখন সময়ের হাতে নির্ভর।
লিখতে আগ্রহী, লেখালেখি করতে ভালোবাসি। চেষ্টা করি মানুষের স্বার্থে দ্রুত খবর পৌঁছে দেওয়ার।