সাতকাহন প্লাস নিউজ ডেস্ক: বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ সেই তেরো পার্বণের একটি হলো ‘পয়লা বৈশাখ’ (Poila Boishakh)। বাংলা ক্যালেন্ডারের প্রথম দিনটি ‘পয়লা বৈশাখ’ (Poila Boishakh) হিসেবে পালিত। বাংলার ঘরে ঘরে উদযাপন হয় নববর্ষের (Nababarsha)। এদিন মিষ্টিমুখে বিনিময় করা হয় নববর্ষের শুভেচ্ছা। তবে দিনটি যে কেবল বাঙালির উৎসব তা নয়, বাংলার ঐতিহ্যপূর্ণ দিনটির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক ইতিহাস।
বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১৪৩০ সাল শেষ হয়ে শুরু হয়েছে ১৪৩১ সাল। ইংরেজি ক্যালেন্ডারের ১৪ এপ্রিল থেকে আরম্ভ হল বাংলার নতুন বছর। বেশিরভাগ বছরেই এই তারিখে নববর্ষের (Nababarsha) উৎসব পালিত হয়। তবে ১৫ এপ্রিল ও পয়লা বৈশাখ পালনের নিয়ম আছে। পঞ্জিকা মত মেনে ১৪ অথবা ১৫ তারিখ পয়লা বৈশাখ পালন করা হয়। এবছর কেন ১৪ এপ্রিল পালন করা হল পয়লা বৈশাখ? (Poila Boishakh) এই প্রশ্নটি নিশ্চয়ই ঘোরাফেরা করেছে আপনার মনেও। পয়লা বৈশাখের (Poila Boishakh) সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ইতিহাস, আজকে জেনে নেওয়া যাক। বাংলার ‘পহেলা বৈশাখ’…
বাঙালির ‘পহেলা বৈশাখ’…
বাঙালির জীবনে পয়লা বৈশাখ তারিখটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দিনটি বাংলার ঐতিহ্য সভ্যতা এবং সংস্কৃতির সঙ্গে একাত্মভাবে জড়িয়ে। দিনটিতে বাঙালি যেন নিজের সংস্কৃতিকে জড়িয়ে ধরে। চলে আসে শিকড়ের কাছাকাছি। প্রত্যেক বাঙালি নিজেদের মতো করে এই দিনটিকে পালন করে। বাংলার সংস্কৃতি এদিন মুখরিত হয়ে ওঠে। বিদেশে থাকা বাঙালিরা এদিন পাশ্চাত্য পোশাক ছেড়ে বাংলার চিরন্তন শাড়ি পাঞ্জাবিতে ফিরে আসে। রবি ঠাকুরের গানে, রসগোল্লার স্বাদে পাতা উল্টায় নতুন বছরের বাংলা ক্যালেন্ডার। বাঙালি যেন আনমনে গিয়ে ওঠে ‘এসো হে বৈশাখ…’। দিনটি প্রত্যেক বাঙালির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলার প্রাচীন গন্ধমাখা ইতিহাস যেন দূর থেকেই গুনগুনিয়ে ওঠে “পুরানো সেই দিনের কথা…”
‘পয়লা বৈশাখের’ ইতিহাস…
মুঘল আমল থেকে পয়লা বৈশাখের উৎসবের কথা জানা যায়। মুঘল বাদশাহ আকবরের সময় থেকে পরিচিত হয় পয়লা বৈশাখ। শোনা যায়, মুঘল আমলে যে হিজরি সন মেনে খাজনা নেওয়া হত, তাতে কৃষিজ ফসল ফলনের সময় অনুসারে কৃষকদের খাজনা দিতে সমস্যা হতো। সমস্যার সমাধানে মুঘল বাদশাহ আকবর বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফতেহউল্লাহ সিরাজিকে আরবি ও সৌর সনের উপর ভিত্তি করে একটি ক্যালেন্ডার বানানোর নির্দেশ দেন।
আর এরপর থেকেই আসে নতুন সনের বাংলা ক্যালেন্ডার যা পরিচিতি পায় ‘বঙ্গাব্দ’ হিসেবে। আকবরের আমলে নিয়ম ছিল চৈত্র মাসে শেষ দিনে খাজনা, শুল্ক, মাসুল পরিশোধ করতে হবে। তার পরের দিন অর্থাৎ পয়লা বৈশাখের দিন জমিদাররা প্রজাদের মিষ্টি বিনিময় করে আপ্যায়ন করবেন। সেই প্রথা এখনো চলে আসছে। তবে তার ধরন বদলেছে। পয়লা বৈশাখ মানেই মিষ্টিমুখ অপরিহার্য।
একদিকে যেমন মুঘল আমল থেকে পয়লা বৈশাখ পালনের রীতির কথা জানা যায়, তেমনই ইতিহাস বিশেষজ্ঞ দের আরেকটি দল বলছেন, বাংলায় শশাঙ্কের আমল থেকে পহেলা বৈশাখ এসেছে। বাংলার সিংহাসনের শশাঙ্কের রাজ্যাভিষেকের পর বঙ্গাব্দ গণনা শুরু হয়েছে।
বাংলার বর্ষবরণ ‘বৈশাখী’ উৎসব…
চৈত্র সংক্রান্তির পরের দিনটিকে পয়লা বৈশাখ হিসেবে পালন করা হয়। দেশের অন্যত্র এই দিনটি ‘বৈশাখী’ নামেও পরিচিত। বাংলার বর্ষবরণের দিনে আনন্দে মেতে ওঠেন সমস্ত বাঙালিরা। নতুন ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে গুটি গুটি পায়ে হাজির ১৪৩১।এবছর পঞ্জিকা মেনেই ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখ পালন করা হল। এদিন উৎসবমুখর বাঙালি বর্ষবরণের আনন্দে মেতে উঠবেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। শুরু হলো বৈশাখ। “বাঙালির মনে প্রাণে, এসো হে বৈশাখ এসো এসো…”।
বাংলার খবর, বাঙালির খবর। আমরা আপনাদের কাছে দ্রুত খবর পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর।