পারিজাত মুখার্জি: বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তন (Climate Change) সারা বিশ্বের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্রমবর্ধমান হারে জলবায়ু পরিবর্তন মানুষের জীবনযাত্রায় (Daily Lifestyle) প্রভাব ফেলেছে। এমন পরিস্থিতিতে চাঞ্চল্যকর তথ্য এল বিজ্ঞানীদের হাতে। যে তথ্য পাওয়া গেছে তা সারা বিশ্বের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলবে। যে রিপোর্টে দায়ী করা হচ্ছে, তাপমাত্রা পরিবর্তনে পরোক্ষ হাত রয়েছে চীনের (China)। বায়ুদূষণ কমানোর জন্য আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র চিন (China) যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তা পরোক্ষভাবে উষ্ণতা বৃদ্ধি করছে। ক্রমাগত হারে উষ্ণতা বৃদ্ধি গ্লোবাল ওয়ার্মিং (Global Warming) এর জন্য দায়ী হতে পারে বলে বিজ্ঞানী মহলের মত।
অতীতের বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছিল, প্রশান্ত মহাসাগরের তাপমাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবার সেই তাপমাত্রা বৃদ্ধির চিনের হাতকে দায়ী করছে বিজ্ঞানী মহল। সম্প্রতি চীন যে পদক্ষেপ নিয়েছে তার শুধুমাত্র প্রশান্ত মহাসাগর নয় উষ্ণতা বৃদ্ধি করতে পারে সারা পৃথিবীর। যার কারণে বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তন একটি চিন্তার সীমা অতিক্রম করবে। বাতাসে ‘অ্যারোসল’-এর মাত্রা কমাতে পদক্ষেপ নিয়েছে চিন সরকার। এই পদক্ষেপ বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য দায়ী বলে দাবি করছে একটি সমীক্ষা। কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে চিন সরকারের তরফে?
‘অ্যারোসল’ কী?
প্রথমেই জেনে নিতে হবে ‘অ্যারোসল’ কি। এটি হল বায়ুমন্ডলে ভেসে থাকা ক্ষুদ্র কণা, যা আগ্নেয়গিরি অগ্নুৎপাত, জৈব বস্তুর দহন, শিল্প কারখানা, অথবা জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সৃষ্টি হতে দেখা যায়। এই কণা বাতাসে ভাসমান অবস্থায় থাকে, পরিবেশ বিজ্ঞানীরা একে বায়ুদূষণের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। বিশ্বব্যাপী বায়ুদূষণ যখন ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে সেই সময় বায়ুদূষণ কমাতে পদক্ষেপ নিল চীন সরকার। ২০১০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে চীন। বাতাসে অ্যারোসল-এর মাত্রা কমাতে চিন সরকারের পদক্ষেপ আগেই আলোচিত হয়েছিল। অ্যারোসল নিঃসরণে চীন সরকার যে সকল পদক্ষেপ নিয়েছে, তা গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর জন্য দায়ী হতে পারে বলে সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে।
অ্যারোসল বাতাসে ভাসমান অবস্থায় থাকে এবং অনেকটা আয়নার মত কাজ করে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, অ্যারোসল মহাকাশ থেকে আগত বিভিন্ন রশ্মি এবং সূর্যরশ্মিকে বাধা দেয়। বিভিন্ন রশ্মি ও আলোক অ্যারোসল কণায় প্রতিফলিত হয় এবং এই সকল আলোক পৃথিবীর উপর প্রভাব ফেলতে পারেনা। যথারীতি পৃথিবীর তাপমাত্রা তুলনায় কম থাকে।
গবেষণায় চাঞ্চল্যকর তথ্য
সম্প্রতি চীনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমীক্ষা চালান একদল গবেষক। সেই সমীক্ষার রিপোর্ট চীনের চিন্তার কারণ হয়েছে। কারণ এই রিপোর্ট থেকে দেখা যাচ্ছে, বাতাসে চিনের অ্যারোসল কমানোর পদক্ষেপ বেজিং সরকারের নীতি বিশ্ব উষ্ণায়ন ঘটাতে পারে। গবেষকরা বলছেন, যেসব অঞ্চলে নিঃসরণ স্বাভাবিক রয়েছে, সেই সকল স্থানে যত না তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে তার চেয়ে অ্যারোসল হ্রাস করার স্থানে তাপমাত্রা অধিক বৃদ্ধি পেয়েছে।
বৃদ্ধি পাচ্ছে তাপমাত্রা!
একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে জানা যায়, উত্তর পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের তাপমাত্রা বিগত কয়েক বছরে অত্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। বেরিং প্রণালী থেকে আলাস্কা উপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত প্রায় হাজার মাইল অঞ্চলের তাপমাত্রা বিগত ১০ বছরে বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ১.৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট।
ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা বৃদ্ধি মৎস জাতীয় প্রাণীর মৃত্যু, বহু প্রাণীর অন্তর্ধানের কারণ হয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অ্যারোসল হ্রাসের জন্য যে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে তা মূলত সামুদ্রিক জীবনের উপর প্রভাব ফেলছে। তবে যদি বাতাসে অ্যারোসল নির্গমন নিয়ন্ত্রণ করা না হয়, তাহলে তা সারা পৃথিবীর জন্য বিপদের কারণ হবে। পৃথিবীর বাতাসে অ্যারোসেলের উপস্থিতি মানুষের নানান রোগ লক্ষণ প্রকাশ করে।
হাঁপানি, শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা, ফুসফুসে ক্যানসার, হৃদ্রোগের সমস্যা ইত্যাদি রোগ দেখা দিতে পারে। পাশাপাশি বহু মানুষের মৃত্যুর কারণ হবে বলেও মনে করা হয়। তাই তড়িঘড়ি বাতাসে অ্যারোসল নির্গমন নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিয়েছে চীন সরকার। তবে তা পরোক্ষে সামুদ্রিক জীবনযাত্রার উপর প্রভাব বিস্তার করছে। তাই বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, চিনের নীতিকে আরো একবার পর্যালোচনা করা দরকার।
বিনোদন, টেলিভিশন, লাইফস্টাইল, ট্রাভেল, ব্যবসা, টেকনোলজি, শিক্ষা, কর্মসংস্থান সংক্রান্ত আরও খবর পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক পেজ ও হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে।
বাংলার খবর, বাঙালির খবর। আমরা আপনাদের কাছে দ্রুত খবর পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর।